সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন
কোটি বছর আগে যতটা সবুজ ছিল আমাদের পৃথিবী, এখন অতটা নেই। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবী দূষিত নরকে পরিণত হচ্ছে। অবশ্য শুধু শিল্প বিপ্লবই দায়ী নয়; আরো অনেক কারণ রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে আমরা সচেতন না হলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনও বদলেছে। সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা বেড়েছে বহু গুণ, বেড়েছে চাহিদাও। এ কথা সবারই জানা যে মানুষের সব প্রয়োজন মেটানোর উত্স প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকৃতি। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের কারণে মানুষের চাহিদার আমূল বদল হয়েছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের ওপর। বাসস্থান ও ক্ষেতের জন্য জায়গা করার জন্য দরকার অনেক জমি। মানুষ সেই জমির ব্যবস্থা করছে বনজঙ্গল সাফ করে। কারখানায় প্রস্তুত হয় মানুষের নিত্যদিনের সামগ্রী। সেই কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন না করে নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যা পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সাগরে। আবার সেটা পুড়িয়ে পুড়িয়ে ক্ষতিকর ধোঁয়া বাতাসেও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য উত্পাদনে সুবিধার জন্য যে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মাটির ক্ষতি করছে। এভাবে পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান দূষিত হচ্ছে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে।
পরিবেশের দূষিত উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বনজঙ্গল নিধনের কারণে বাসস্থান হারাচ্ছে নানা প্রাণী। সাগরের পানি দূষিত হওয়ায় বিপন্ন অনেক জলজ জীবন। প্রাণীর এ বিপর্যয়ের মূল্যও কিন্তু আমাদের দিতে হবে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, মৌমাছির সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে। পরাগায়নের মাধ্যমে আমাদের বিপুল পরিমাণ খাদ্য উত্পাদনে মৌমাছির বিকল্প নেই। তাদের এই দুরবস্থা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। আমরা যদি আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন না হই, তাহলে বেশি দিন পৃথিবীতে টিকতে পারব না। আমাদের ধ্বংস হবে সময়ের ব্যাপার।
পরিবেশ বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ তাই আমাদেরই নিতে হবে। জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা যতটা সম্ভব কমাতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করলে দূষণের মাত্রা আরো কমবে। আমাদের পৃথিবীতে শুধু আমরাই বাঁচাতে পারব। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় সংকল্প। তাহলেই আমরা আমাদের অস্তিত্ব আরো অনেক বছরের জন্য নিশ্চিত করতে পারব।